ডলার সংকটের কারণে আমদানিতে বিভিন্ন নীতিগত শর্ত দেওয়া আছে। এর প্রভাবে বৈদেশিক বাণিজ্যের ঘাটতি কিছুটা কমছে। চলতি হিসাবের পরিস্থিতিও উন্নতি হয়েছে। তবে বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে আর্থিক হিসাবে। এর মূল কারণ, যে হারে দেশে বিদেশি ঋণ আসছে তার চেয়ে বেশি আগের নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে করে বহির্বিশ্বের সঙ্গে দেশের সামগ্রিক লেনদেনে বড় ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের (ব্যাল্যান্স অব পেমেন্ট) পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাইয়ে ৪৩৫ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এসময় আমদানি হয়েছে ৪৯৯ কোটি ডলারের পণ্য। এতে করে অর্থবছরের প্রথম মাসেই ৬৩ কোটি ৫০ লাখ (৬ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন) ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি এক ডলার ১১০ টাকা ধরে) এর পরিমাণ ৬ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা।
ডলার সংকট কাটাতে নানা উপায়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত বছরের জুলাই থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানির শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। একইসঙ্গে তুলনামূলক কম প্রয়োজন বা বিলাসী পণ্যের এলসি খোলার সময় ৭৫ থেকে শতভাগ পর্যন্ত নগদ মার্জিনের শর্ত দেওয়া আছে। এ মার্জিনের টাকা দিয়ে কোনো ব্যাংক থেকে ঋণও নেওয়া যাবে না। এছাড়া বড় এলসি খোলার ২৪ ঘণ্টা আগে তথ্য নিয়ে তার সঠিকতা যাচাই করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ডলার সংস্থান করা ছাড়া ব্যাংকগুলোকে এলসি খুলতে মানা করা হয়েছে। এর প্রভাবে গত অর্থবছরে আমদানি ১৪ দশমিক ৯২ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে, রপ্তানি বেড়েছে ১৫ দশমিক ৬১ শতাংশ।
এক হাজার ৭১৫ কোটি ৫০ লাখ (১৭ দশমিক ১৫ বিলিয়ন) ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে গত ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষ হয়। এর ধারাবাহিকতায় ঘাটতি নিয়েই শুরু হয়েছে চলতি অর্থবছর।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাই মাসে বৈদেশিক বাণিজ্যের আর্থিক হিসাবে ৮৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঘাটতি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ গুণের চেয়ে বেশি। গত অর্থবছরের জুলাইয়ে এ ঘাটতি ছিল ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি, বিশ্ববাজারে জ্বালানিসহ সব ধরনের পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী ও আশানুরূপ রেমিট্যান্স না আশা এবং বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় এ ঘাটতির সৃষ্টি হচ্ছে।
তারা জানান, সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি বেড়ে যাওয়া মানে বিভিন্ন উৎস থেকে দেশে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আসছে, তার চেয়ে বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে পরিশোধ ঝুঁকি এড়াতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বা রিজার্ভ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রচুর পরিমাণ ডলার বিক্রি করছে।
আপনার মতামত লিখুন :