মুন্সিগঞ্জের মেঘনা নদীতে বাল্কহেডের ধাক্কায় ট্রলারডুবির উদ্ধার অভিযান চলছে। উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস, কোস্ট গার্ড, নৌ পুলিশ ও বিআইডব্লিএসহ একাধিক সংস্থা। ৪ শিশুসহ পাঁচজন এখনও নিখোঁজ রয়েছে। এর আগে শনিবার সকালে সুমনা হক (২৮) নামে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নদীর তলদেশ থেকে বিআইডাব্লিউটিএ মরদেহটি উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় ৪ শিশুসহ ৫ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে দাবি স্বজনদের। নিখোঁজরা সবাই মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বাসিন্দা। নিখোঁজরা হলো, নিহত সুমনার দুই মেয়ে জান্নাতুল মাওয়া (৬), সাফা আক্তার (৪), তাদের চাচাতো বোন মারওয়া (৮), নিহত সুমনার দুলাভাই সাব্বির হোসাইন (৪০) ও সাব্বিরের ছেলে রিমাদ (২)।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, শুক্রবার বিকেলে ১১ জন একটি ট্রলারে করে গজারিয়া থেকে মেঘনা নদীতে ঘুরতে বের হন। ঘুরতে ঘুরতে তাদের ট্রলার চরকিশোরগঞ্জ এলাকায় আসে। সেখান ঘোরাঘুরি শেষে ট্রলারটি সন্ধ্যার পর গজারিয়ার দিকে যাচ্ছিল। ওই সময় নারায়ণগঞ্জ থেকে বালু নিতে মুন্সিগঞ্জের বালু মহালের দিকে আসছিল একটি খালি বাল্কহেড। সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে বাল্কহেডটি ট্রলারটিকে ধাক্কা দেয়। তৎক্ষণাৎ ট্রলারটি ১১ যাত্রী নিয়ে ডুবে যায়। স্থানীয় ব্যক্তিদের সহযোগিতায় পাঁচজন তীরে উঠতে পারলেও ৬ জন নিখোঁজ হন।
শনিবার বিকালে চরকিশোরগঞ্জ ফেরিঘাট এলাকায় স্বজনদের খোঁজে এসেছেন জাহেদুল ইসলাম। তিনি নিখোঁজ জান্নাতুল মাওয়া, সাফা ও মারওয়াদের বড় চাচা। তিনি বলেন, আমার ছোট ভাই মফিজুল হক, তার স্ত্রী সুমনা, তাদের দুই মেয়ে এবং আমার অন্য আরেক ভাতিজিকে নিয়ে ট্রলারে ঘুরতে বের হয়েছিল। কত খুশি ছিল ওরা। ট্রলার ডুবে মফিজুল সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও আমার তিনটি ভাতিজি এখনও নিখোঁজ রয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে ওদেরকে খুঁজে যাচ্ছি। নদীর এদিক সেদিকে আমার নিজেরাও ট্রলার নিয়ে খুঁজে ফিরছি। কেথাও ওদের পাচ্ছি না।
এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, এতো ছোট ছোট মুখখানি। সারাদিন বাড়িতে খেলা করতো, দৌড়াদৌড়ি করতো। আজকে ওরা ঘুরতে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে গেল। ওদের খুঁজে যাচ্ছি। ওদের মুখখানি আমরা শেষবারের মতো দেখতে চাই।
বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক (নারায়ণগঞ্জ বন্দর) ও কমান্ডার উদ্ধার ইউনিট প্রত্যয় ওবায়দুল করিম খান বলেন, নদীতে প্রচণ্ড রকমের স্রোত, নদীর গভীরতা ১২০ ফুটের ওপরে। সেই সঙ্গে কিছুক্ষণ পরপর বৃষ্টি হচ্ছে। এতে উদ্ধার তৎপরতা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। তারপরেও আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। সম্ভাব্য স্থানগুলোতে কোস্টগার্ড, বিআইডব্লিউটিএ, নৌ পুলিশের সদস্য ও ডুবুরিরা কাজ করে যাচ্ছে। যে পর্যন্ত নিখোঁজদের কোনো সন্ধান পাওয়া না যাবে, সেই পর্যন্ত উদ্ধার তৎপরতা চলতে থাকবে।
গজারিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. ইজাজ উদ্দিন বলেন, ট্রলারডুবির ঘটনায় সকালে সুমনা হক নামের এক নারীর মরদেহ নদীর তলদেশ থেকে উদ্ধার করেছে বিআইডব্লিউটিএ। এ ঘটনায় এখনও শিশুসহ ৫ জন নিখোঁজ রয়েছে। তাদের উদ্ধারের অভিযান চলছে।
আপনার মতামত লিখুন :