দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা ও উজ্জীবিত রাখতে নানামুখী কৌশলে এগোচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড। এই মুহূর্তে কারাগারে বন্দি নেতাকর্মীদের মুক্ত করে আন্দোলনে সক্রিয় করাই প্রধান লক্ষ্য দলটির। কারামুক্ত সবাইকে রোজার মাসে ইফতার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, দায়িত্বশীল নেতারা গ্রেপ্তার হওয়ার পর সারা দেশে বিভিন্ন স্তরে যেসব নেতাকর্মী সাংগঠনিক দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন, তাদের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে ‘ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা’ জানানো হবে। গত সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।বিএনপি নেতারা জানান, সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে একদফা আন্দোলন জোরদার করার পর সারা দেশে নেতাকর্মীরা মামলা ও গ্রেপ্তারের শিকার হন। গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ ঘোষণা করার পর গ্রেপ্তার-নির্যাতন আরও তীব্র হয়। ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হয়। দলের অনেক সিনিয়র নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই পরিস্থিতির মধ্যেই ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পরদিন পর্যন্ত বিএনপি হরতাল, অবরোধ, অসহযোগ ও গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করে।
বিএনপির তথ্য মতে, ২৮ অক্টোবরের কয়েকদিন আগে থেকে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন পর্যন্ত সারা দেশে ১ হাজার ১৮৪টির বেশি মামলায় ১ লাখ ৫ হাজার ৬৮৪ জনের মতো নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। এ সময় ২৭ হাজার ৫১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নেওয়া হয়, একজন সাংবাদিকসহ মৃত্যুবরণ করেন ২৮ জন। ৯ হাজার ৭০৪ জন আহত হন।
ছাড়া বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে ইফতারের আয়োজন করবে। পাশাপাশি সারা দেশের সব সাংগঠনিক ইউনিটেও ইফতার মাহফিল আয়োজনের নির্দেশনা দেওয়া হবে।
নির্যাতিত নেতাকর্মীদের মূল্যায়নের এই চিন্তাকে সময়োপযোগী আখ্যা দিয়ে বিএনপির মধ্যম সারির একাধিক নেতা বলেন, তৃণমূলের যেসব নেতাকর্মী আন্দোলনে সক্রিয় থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তাদের অনেকেরই দলীয় পদ-পদবি নেই। তাদের সম্মানের পাশাপাশি ভবিষ্যতে সাংগঠনিকভাবে মূল্যায়ন করা উচিত। ফলে নেতাকর্মীরা কর্মসূচি সফলে আরও প্রেরণা পাবেন।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টন বলেন, ‘কারামুক্ত নেতাকর্মীদের সংবর্ধনা ও নেতাকর্মীদের ধন্যবাদপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্তটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ভালো উদ্যোগ। কেননা রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়েই অধিকাংশ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেছেন।’
এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল গতকাল বুধবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। পরে তিনি জানান, ‘আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। জামিন পেয়েও কারামুক্ত হতে নানা ভোগান্তি হয়েছে। সরকারের নানা বাহানা ও দমন-পীড়নের মধ্যেই কারামুক্ত হয়েছি।’
রাজধানীর পল্টন থানার এক মামলায় ৩১ অক্টোবর ঢাকার কাঁঠালবাগানের একটি বাসা থেকে আলালকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। এ ছাড়া কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন যুবদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল আনোয়ার আহাম্মদ। তাকে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর উত্তরায় লিফলেট বিতরণকালে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল।
দৈসি
আপনার মতামত লিখুন :